|

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম [নিয়ত, রাকাত, তাকবীর] জেনে নিন

পুরো বছরে আমাদের মাঝে দুইটি ঈদ (ঈদুল ফিতর – ঈদুল আযহা) আসে। ঈদের নামাজের নিয়ম দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ থেকে কিছুটা ডিফরেন্ট, তাই আলাদা ভাবে এই দুই ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন হয়। আপনি যদি ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে চান এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কেননা এখানে আমরা কোরবানি ঈদের নামাজের নিয়ত, নিয়ম সহ কত রাকাত এবং কয় তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

কুরবানী ঈদ (ঈদুল আযহা)

কোরবানির ঈদ, যাকে ঈদুল আযহা বা বড় ঈদও বলা হয়, এটি মুসলমান সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় উৎসব। যা পালিত হয়ে থাকে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে। এবং এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যা পবিত্র হজ আদায়ের পর উদযাপিত হয়।

কুরবানী ঈদের তাৎপর্য – (ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস)

কুরবানী ঈদ হযরত ইবরাহিম (আ.) এর মহা ত্যাগের স্মৃতিচারণ করে। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে যখন স্বপ্নে আদেশ করেছিলেন, যে তিনি যেন তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস, তার পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করেন। এবং এ স্বপ্নের পর ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালনার্থে প্রস্তুত ও হন। অতঃপর মহান আল্লাহ তিনার এই ত্যাগের পরীক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট হন এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে একটি ভেড়া কোরবানির নির্দেশ দেন।

একটি হাদিসঃ

রাসূল সাঃ ঈদের নামাজের প্রথম রাকাতে কখনো সূরা আ-লা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা গাশিয়াহ পড়তেন। আবার কখনো উভয় রাকাতে যথাক্রমে সূরা কাফ এবং সূরা কামার পড়তেন।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত

নিয়তের প্রসঙ্গ যেহুতু এসেছে দুইটা কথা না বললেই নয়। নিয়ত আরবি/ বাংলা কিংবা আপনি যেই ভাষারই হোন না কেন নিজ ভাষায় নিয়ত করা যেতে পারে। এটা জরুরি নয় শুধুমাত্র আরবিতে করা। নিম্নে আমরা ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত/ বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থসহ উল্লেখ করেছি।

ঈদের নামাজের নিয়ত আরবিতে যেভাবে করবেন।

نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الاضحى مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ

বাংলা উচ্চারণঃ-

নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’লা রাকআতাই সালাতিল ঈদিল আযহা, মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাত, ওয়াজিবুল্লাহি তা’আলা, ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমামি, মতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’ বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

ঈদের নামাজের নিয়ত বাংলায় যেভাবে করবেনঃ-

আমি কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে ঈদুল আযহার ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সাথে আদায় করছি।

নিয়ত শেষে তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাঁধবেন।

মহিলাদের ঈদের নামাজের নিয়তঃ-

মনে রাখবেন ঈদের নামাজ জামাত ছাড়া আদায় হয় না। তাই মহিলারা ঘরে ঈদের নামাজ আদায় করলে আদায় হবে না। কোথাও যদি মহিলাদের ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয় ওইটা আলাদা ব্যাপার। তো আপনার প্রশ্ন হতে পারে মহিলাদের ঈদের নামাজের নিয়ত কি আলাদা?

উত্তরঃ– না উপরে উল্লেখ্য নিয়ত ও মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম 1

কোরবানির ঈদের তাকবীর

الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

এই দোয়াটি ৯ যিল হজ হতে ১৩ জিলহজ আসরসহ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার পড়া ওয়াজিব। মনে রাখবেন এটি সুন্নত বা নফল নয়।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম

ঈদের নামাজের নিয়ত তাকবীর রাকাত জানার পর এখন আমরা পূর্ণাঙ্গ কোরবানি ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন শিখব।

সকল নামাজ আদায়ের পূর্বে নামাজের আগের যে ফরজ গুলো রয়েছে যেমনঃ (শরীর/ কাপড়/ নামাজের জায়গা পাক ও পবিত্র ইত্যাদি) কমপ্লিট করে নামাজে দাঁড়াবো।

  • নিয়ত করব।
  • আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধবো।
  • ছানা পড়বো।
  • অতঃপর ইমাম সাহেব অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিবে প্রথম ২ তাকবীরে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিব এবং তৃতীয় তাকবীরে হাত নাভির নিচে বাধবো।
  • তারপর ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা মিলিয়ে অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু সেজদা আদায় করে পুনরায় দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন।
  • ইমাম সাহেব সূরা ফাতেহা এবং তার সাথে অন্য একটি সূরা পড়বেন।
  • অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিবে। প্রতিবার কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিবে এবং চতুর্থ তাকবীরের পর রুকুতে যাবে কারণ সেটা রুকুর তাকবীর।
  • এখন অন্যান্য নামাজের নেয় রুকুর সেজদা শেষ করবে।
  • শেষ বৈঠকে তাশাহুদ দুরুদ/ শরীফ/ দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবে।

ঈদের নামাজ কয় তাকবীর?

ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানঃ
দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর ওয়াজিব হওয়ার বিধানটি হাদিস সম্মত। শুধু তাই নয় মারফু/ মাওকুফ ও ভাই হাদীস দ্বারাও তা প্রমাণিত। নিম্নে ১টি সহি হাদিস উদাহরণস্বরূপ পেশ করা হলোঃ

আবু আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমাকে কতিবাই সাহাবা বলেছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েছিলেন। তাতে তিনি চার চার তাকবীর বলেছিলেন। অতঃপর নামাজ শেষে নামাজ শেষে নবী (সা.) আমাদের লক্ষ্য করে বললেন, ভুলে যেও ন্‌ ঈদের নামাজের তাকবীর জানাজার নামাজের নেয়। তারও সাথে নবী সাঃ ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান:
(তাহাবী শরীফ, ২/৪০০পৃ)

উক্ত হাদিস দ্বারা দুই রাকাত নামাজে চার চার করে ৮ তাকবীর বলা হয়েছে। বোঝা যায় ২ রাকাতে মোট আট তাকবীর। তাইতো? এর মানে হলঃ প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা সহ ৪ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর সহ ৪ তাকবীর। তাকবীরে তাহরিমা এবং রুকুর তাকবীর বাদ দিলে অতিরিক্ত থাকে ৬ তাকবীর।

ঈদের নামাজ কয় রাকাত?

উল্লেখ্য আলোচ্য বিষয়ের মাধ্যমে ঈদের নামাজের রাকাত সংখ্যার ব্যাপারটি ক্লিয়ার যে উভয় ঈদের নামাজ ২ রাকাত ওয়াজিব অতিরক্ত ৬ তাকবীরের সাথে।

শেষ কথা

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম [নিয়ত, রাকাত, তাকবীর] এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের সাথে পূর্ণাঙ্গ ঈদের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে সহি ভাবে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *