শবে কদরের নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া

শবে কদরঃ– শব্দটি ফার্সি! ফার্সিতে “শব” মানে রজনী, আর “কদর” মানে মহিমান্বিত, একত্রে যার অর্থ দাঁড় মহিমান্বিত রজনী। শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হাজার মাসের রাত্রি অপেক্ষা উত্তম। রাত্রি সমূহের মধ্যে লাইলাতুল কদরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সর্বাধিকসম্মানিত করেছেন। কারণ এ রাত্রিতে পবিত্র কুরআন অবতীর্ন করা হয়

রমজানের শেষ দশ দিনের যে কোন এক বিজোড় রাত্রিতে শবে কদর হয়ে থাকে। হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর রমযানের শেষ দশকের যে কোন বিজোড় রজনীতে (সহীহ বুখারী)।

শবে কদরের ফজিলত

সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এ রাত্রি আল্লাহর রহমতে ভরপুর থাকে। এ রাত্রির ফযীলত ও নামকরণে পবিত্র কুরআনে একটি সূরা-ই নাযিল করা হয়েছে, যার নাম সূরাতুল কদর।

এতে বলা হয়েছেঃ-
”আমি আল কুরআন অবতীর্ন করেছি লাইলাতুল কদরে অর্থাৎ মহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জান? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রুহ অবতীর্ন হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।” (৯৭তম সুরা সূরাতুল কাদর)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ- তোমাদের নিকট এমন একটি মাস আগত যাতে এমন একটি রাত্রি রয়েছে যা এক হাজার মাস হতেও শ্রেষ্ঠ।” সুতরাং যে ব্যক্তি এ রাত্রির ফযীলত ও বরকত হাসিল করবে না সে সমস্ত কল্যান হতে বঞ্চিত হবে। বস্তুত যে ব্যক্তি এ রাত্রিতে কিছুমাত্র ইবাদত বন্দেগী করে না, তার চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে?

এ রাত্রি গুনাহ মাফের রাত্রি, দু’আ কবুলের রাত্রি। এ রাত্রিতে নফল নামায আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, দরুদ শরীফ পাঠ করা, যিকির করা, তাসবীহ তাহলীল করা, কবর জিয়ারত করা অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। এ রাত্রি ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়া উত্তম। যদি পূর্ণ রাত্রি ইবাদত করতে পারা না যায় তবে যতটুকু সম্ভব ইবাদত করবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, নফল ইবাদত করতে গিয়ে যেন কোন ফরজ ছুটে না যায়।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

কদরের রজনীতে নামাজ আদায়ের নিয়ম হল এশার নামাজের পর তারাবি নামাজ আদায় করে বিতরের নামাজ বাদ রেখে দু’ দু’রাকাত করে যত বেশি সম্ভব কদরের নিয়তে নফল ও তাহাজ্জত নামাজ আদায় করা। সেহরির পূর্বে বিতর নামাজ আদায় করে সেহরি খেয়ে কিছু সময় তসবিহ তাহলিল ও জিকির করবে তারপর ফজর নামাজ আদায় করবে। তবে অসুস্থ কিংবা শরীর খারাপের আশঙ্কা থাকলে সাধ্য অনুযায় চেষ্টা করবে।

এ নামাজও অন্যান্য নফল নামাজের মত পড়বে। যতক্ষণ যত রাকাত মনে চায় পড়বে। অবশ্য এই রজনীতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল যেমনঃ- নিজের প্রয়োজন গুলো আল্লাহর কাছে পেশ করার জন্য দু” চার রাকাত সালাতুল হাজত ও সালাতুল তাজবিহ এর নামাজ পড়া যেতে পারে।

হাদিসে বর্ণিত আছেঃ-

রাসূল সাঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চার রাকাত নামাজ কদরের রাতে আদায় করবে এবং উক্ত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ২১ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা ওই ব্যক্তিকে সদ্ধ ভূমিষ্ঠ শিশুর নিষ্পাপ করে দিবেন।

অন্যত্রঃ-

রাসূল সাঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কদরের রাত্রে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং তার প্রতিরাকাতে সুরা ফাতেহার পরে সূরা কদর ও সূরা ইখলাস তিনবার পড়বে। নামাজ শেষে সিজদায় গিয়ে নিম্নের দোয়াটি কিছু সময় পাঠ করে আল্লাহর দরবারে যা প্রার্থনা করবে তিনি তাই কবুল করবেন এবং তার প্রতি অসংখ্য রহমত বর্ষণ করবেন।

سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ

উচ্চারনঃ সুহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি অলা…ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর।

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত

এ রাত্রিতে নফল নামাজ আদায়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট রাকআত সংখ্যা কিংবা ‘নামাজ আদায়ের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন নেই। অন্যান্য নফল নামাযের ন্যায় যত রাকআত সম্ভব নামায আদায় করবে। নামাজের নিয়্যাতের ব্যাপারেও কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। আরবীতে নিয়্যাত করাও জরুরী নয়। এক সালামে দুই রাকআত কিংবা এক সালামে চার রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব নামায আদায় করবে। তবে উত্তম হলো দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়া।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত

পূর্বেই বলা হয়েছে আরবিতে নিয়ত করাটা জরুরি নয়। আপনার নিজ ভাষায় নিয়ত করলেও হয়ে যাবে। এরপরেও আমরা শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি ও বাংলা নিম্নে প্রদান করলাম।

نَوَيُتْ اَنْ اصَّلي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتيْ صَلّاه ليله القدر سَنُّهُ رَسول اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا الى جهَه اَلْكَعْبه الشَّريفُه اللَّهُ اكَّبِرْ

বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াতুআন উসল্লিয়া লিল্লাহি তা”য়ালা রকাতাই সলাতি লাইলাতুল কদরী সুন্নাতু রসুলিল্লাহি তা”য়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা”বাতিশ শারিফাতি “আল্লাহু আকবর”

বাংলা নিয়তঃ আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’রাকাত কদরের নফল নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার”

চার রাকাত একত্র পড়ার ক্ষেত্রেঃ- আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে চার রাকাত কদরের নফল নামাজ আদায় করছি।

শবে কদরের দোয়া

শবে কদরের নামাজের দোয়া কোনগুলো এবং কোন কোন দোয়া পড়তে হয় সেটি অনেকেই জানতে চাই। নিম্নে বিভিন্ন নামাজের বই থেকে প্রাপ্য কিছু শবে কদরের দোয়া উল্লেখ করা হলো।

প্রতি চার রাকাত অন্তর অন্তর নিম্নের দোয়াটি ১০০ বারঃ

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা”ফু আন্নি।

অন্য বর্ণনায় প্রতি চার রাকাত অন্তর অন্তর ১০০ বারঃ

اللهم انت عفو تحب العفو فاعفو عني يا غفور يا غفور

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আন্তা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা”ফু আন্নি ইয়া গফুরু ইয়া গফুরু।

এই দোয়াটিও পাওয়া যায়ঃ যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে

سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ

উচ্চারনঃ সুহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি অলা…ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *