| |

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া

শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য দামি একটি রজনী, যার মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায় পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর একাধিক হাদিস হতে। শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস ও এর ফজিলত সম্পর্কে জানতে গিয়ে অত্যন্ত সুন্দর একটি হাদিস জানতে পারলাম, হাদিসটি হলঃ

হযরত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ অর্ধ শা’বানের রাত্রিতে (অর্থাৎ শবেবরাতে) আল্লাহ তায়ালা (নিকটতম আসমানে) অবতীর্ন হন এবং ক্ষমা করে দেন তাঁর সকল সৃষ্টিকে – মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ব্যতীত {ইবনে মাযাহ}।

উক্ত হাদিস এবং শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস ও এর ফজিলত নামক আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি শবে বরাতের মর্যাদা ও তাৎপর্য সম্পর্কে। এর দ্বারা এই বিষয়টি ক্লিয়ার যে, মুসলিম উম্মাহর জন্য এই রজনীটি খুবই পবিত্র এবং মর্যাদাবান রজনী। তাই আমাদের উচিত শবে বরাতের নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও আমল সম্পর্কে জেনে সঠিকভাবে তাদানুযায়ী আমল করে নিজের পাপ মোচন এবং আল্লাহর সান্নিধ্য হাসিল করা।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম

এ নামাজ আদায়ের নিয়ম অন্যান্য নফল নামাজের ন্যায়, অর্থাৎ অন্যান্য নফল নামাজ যে রূপ দুই রাকাত কিংবা চার রাকাত করে পড়া যায় (তবে উত্তম দুই দুই করে পড়া) শবে বরাতের নামাজ ও ঠিক তাই। তবে পার্থক্য শুধু নিয়তের ক্ষেত্রে, নিয়াতের সময় শুধু শবে বরাতের নামাজের নিয়ত করবে।

আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রাঃ এর পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা নামক কিতাবে লিখেন, শবে বরাতের রাতে দু দু’রাকাত করে যত বেশি সম্ভব নামাজ আদায় করবে। এই নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পড়ে সূরা ৩ বার, ১০ বার, ২১ বার, ২৭ বার, ৩৩ বার, কিংবা ৫০ বার পর্যন্ত পড়া যায়।

মনে রাখবেনঃ- নারী এবং পুরুষ ও ভয়ের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

এ রাত্রিতে নফল নামাজ আদায়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট রাকআত সংখ্যা কিংবা নামাজ আদায়ের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন নেই। অন্যান্য নফল নামাজের ন্যায় যত রাকআত সম্ভব নামাজ আদায় করবে। শবে বরাতের নামাজের নিয়তের ব্যাপারেও কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। আরবীতে নিয়্যাত করাও জরুরী নয়। এক সালামে দুই রাকআত কিংবা এক সালামে চার রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব নামাজ আদায় করবে।

যদি দুই দুই রাকআত করে নামাজ আদায় করবে বলে ইচেছ হয় তাহলে বাংলায় এভাবে নিয়্যাত করবে যেঃ

আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য দুই রাকআত নফল নামায আদায় করার নিয়্যাত করলাম- আল্লাহু আকবার। এতেই নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে। এরপরেও অনেকে শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবিতে এবং বাংলা উচ্চারণ তালাশ করে থাকেন তাদের জন্য নিম্নে দেওয়া হলঃ

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবিঃ

نَوَيُتْ اَنْ اصَّلي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتيْ صَلّاه ليله البراءه سَنُّهُ رَسول اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا الى جهَه اَلْكَعْبه الشَّريفُه اللَّهُ اكَّبِرْ

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াতুআন উসল্লিয়া লিল্লাহি তা”য়ালা রকাতাই সলাতি লাইলাতিল বারায়াতি সুন্নাতু রসুলিল্লাহি তা”য়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা”বাতিশ শারিফাতি “আল্লাহু আকবর”

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলাঃ

আমি ক্যাবলামুখী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দু’রাকাত শবে বরাতের নামাজ আদায় করছি “আল্লাহু আকবার”

চার রাকাতের ক্ষেত্রে দুই এর জায়গায় চার বললেই চার রাকাত নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে।

শবে বরাতের আমল

এ রাত্রিতে যতদূর সম্ভব জাগ্রত থেকে নফল নামাজ আদায় করা, যিকির করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাওবা করা, দরুদ শরীফ পাঠ করা, তাহাজ্জুদ নামাজ ও সালাতুত তাসবীহ নামাজ আদায় করা, কবর যিয়ারত করা, ফকীর মিসকিনকে দান খয়রাত করা।

আল্লাহ পাকের রহমত লাভের জন্যে অত্যন্ত বিনীতভাবে মুনাজাত করা এবং পরদিন রোজা রাখা ভাল। তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, সারারাত নফল নামাজ আদায়ের কারণে যেন ফজরের নামাজ কাজা না হয়। কারণ ফজরের নামাজ ফরজ, আর এ রাত্রিতে জাগ্রত থেকে নামাজ আদায় করা নফল। নফল কখনো ফরজের সমতুল্য হবে না।

শবে বরাতের রাতে বেশী বেশী করে আল্লাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি করবে এবং অতীত গুনাহ থেকে তাওবা করবে। উল্লিখিত বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালা এ রাত্রে তার অসংখ্য সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন। শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

কিন্তু মুশরিক, বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী, পায়ের নীচের গিরা ঢেকে কাপড় পরিধানকারী, ও পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী, যাদুকর, গণক, বাদক এই সকল মানুষদের মাফ করা হয় না।

কিন্তু এরপরও আশা করা যায়, অন্তর থেকে তাওবা করলে আল্লাহ পাক হয়তো ক্ষমা করে দিবেন। কারণ আল্লাহ পাক হলেন অফুরন্ত ক্ষমাশীল এবং দয়ার সাগর । কিন্তু হক্কুল ইবাদ অর্থাৎ মানুষের অধিকার খর্ব করার অপরাধ, কাউকে কষ্ট দেয়া হলে, কারো হক নষ্ট করা হলে, অন্যের ঋণ পরিশোধ করা না হলে তা আল্লাহ পাক ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে।

শবে বরাতের দোয়া

এর রজনীতে বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের অতীতের গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে কান্নাকাটি করে মাফ চাওয়া। এবং আল্লাহ পাকের ক্ষমা পেতে তিনি আমাদেরকে যে সমস্ত দোয়া শিখিয়েছেন সেগুলো বেশি বেশি করে পাঠ করা। সেরকম কিছু শবে বরাতের দোয়া সমূহ নিম্নে দেয়া হলোঃ

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা”ফু আন্নি।

اللهم انت عفو تحب العفو فاعفو عني يا غفور يا غفور

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আন্তা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা”ফু আন্নি ইয়া গফুরু ইয়া গফুরু।

বিশেষ দ্রষ্টব্য

শবে বরাতের রাত্রিতে আতশবাজী করা গুনাহের কাজ। যাবতীয় বিদাআত ও শরীয়ত পরিপন্থী কাজ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে। এ রাত্রি আনন্দ উল্লাস করার রাত্রি নয় বরং আল্লাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি করে গুনাহ মাফ লওয়ার রাত্রি ।

আমাদের দেশের কিছু কিছু এলাকা আছে যেখানে মহিলারা হালুয়া রুটি তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন। পরে এত ক্লান্ত হয়ে পরেন যে, ইবাদত করার আর সুযোগ পান না। এটা কখনো ঠিক নয়। কেউ কেউ মনে করেন এ রাত্রিতে হালুয়া রুটি তৈরী করতেই হবে। এটা সম্পূর্ণ বিদাআত।

ফকীর মিসকিনকে খাওয়ানো কিংবা সওয়াবের নিয়্যাতই যদি থাকে তাহলে এ রাত্রিতে সবার বাড়িতে শুধু হালুয়া রুটি কেন? অন্য কিছুওতো তৈরী করা যায়। ভাত খাওয়ালেতো তারা বেশী খুশী হতো। কারণ রুটিতে ফকীরদের ব্যাগ ভরে যায় অথচ খাওয়ার রুচী হয় না। অথচ কিছু ডাল ভাত হলে অবশ্যই তারা তুলনামুলক বেশী খুশী হতো।

শবে বরাতের নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

শবে বরাত একটি বিশেষ ফজিলত পূর্ণ রাত। এই রাতে একজন মুসলিম ব্যক্তি যে সকল ইবাদত করবে যেমনঃ কোরান তেলোয়াত, জিকির, নামাজ এই সব কিছু নফল ইবাদত।

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

শবে বরাতের নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত নয়। যেহেতু এটি নফল নামাজ তাই যার যতো রাকাত ইচ্ছে নামাজ পড়তে পারবে। শবে বরাতের নামাজ ২ রাকাত – ২ রাকাত করে যত ইচ্ছে আদায় করা যায়।

শবে বরাতের নামাজ কি বিতর নামাজের আগে পড়তে হয়?

আপনি চাইলে বিতর নামাজ সামনে রেখে কিংবা বিতর নামাজ পড়ে শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে নফল ইবাদত করার শেষ পর্যায়ে বিতর নামাজ পড়া অতি উত্তম।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *