রোজার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ-অর্থ সহ
রোজা মুসলিম উম্মাহর আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সবচেয়ে মহিমান্বিত ইবাদত। রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি।
পবিত্র কোরআনের ভাষায় !
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ)
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।
(সূরা বাকারা: 183)
হাদিসের ভাষায় !
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেনঃ- بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ البَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَان
অর্থঃ- ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত!!
১/ এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।
২️/ সালাত কায়েম করা।
৩️/ যাকাত প্রদান করা।
৪️/ হজ করা।
৫️/ রমজানের রোযা রাখা।
((বুখারিঃ ৮, মুসলিমঃ ১৬))
উপরোক্ত কালামুল্লাহর আয়াত ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সিয়াম ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠতম বুনিয়াদগুলোর একটি, এবং প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট ও অকাট্য। এটি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি, যা ঈমান ও তাকওয়া অর্জনের পথে অপরিহার্য কর্তব্য।
মনে রাখা উচিত রোজা শুধু ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকার নাম নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের এক মহা প্রশিক্ষণ। আর রোজার সঠিকতা ও গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে নিয়ত একটি অপরিহার্য বিষয়। বলা হয় (“إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ” প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।)
কাজেই, এই আর্টিকেলে রোজা রাখার নিয়ত—নফল ও রমজানের জন্য—উল্লেখ করা হবে যারা আরবি জানেন তারা আরবি নিয়ত দেখতে পারবেন আর যারা আরবি না জানেন তারা বাংলায় উচ্চারণ আনুসরণ করুন। আমাদের সকলের উচিত সঠিকভাবে রোজার নিয়ম ও নিয়ত শিখে সে অনুসারে আমল করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেস্টা করা।
রোজার নিয়ত আরবি
যেকোনো নিয়ত মূলত অন্তরের কাজ, তবে মুখে উচ্চারণ করাও সুন্নত। এটি সেহরির সময় কিংবা রাতের কোনো অংশে করা যায়। নিয়ত দ্বারা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা পালনের দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করি। নিচে রমজানের রোজার নিয়ত আরবি এবং বাংলা অর্থ ও উচ্চারণসহ দেওয়া হলো।
রোজার নিয়ত আরবি | نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم |
বাংলা উচ্চারণ | নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক! ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম। |

রোজার নিয়ত বাংলা
নিয়ত মানে হলো কোনো কাজ করার জন্য ইচ্ছে পোষণ করা। তেমনি রোজা রাখার ইচ্ছে পোষণ করাই রোজার নিয়ত। রোজার রাখার জন্য নিয়ত আরবিতেই করতে হবে এমন কোনো বাদ্ধবাদকতা নেই। চাইলে নিজের ভাষা বাংলাতে রোজার নিয়ত করতে পারেন।
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল তোমার নির্দেশে পবিত্র রমজানের ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব, তুমি আমার রোজা কবুল করে নাও এবং আমাকে পানাহার থেকে বিরত থাকার শক্তি দাও। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
নফল রোজার নিয়ত আরবি এবং বাংলা
আপনি যে কোনো নফল রোজার ক্ষেত্রে নিম্নের নিয়ত ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, নিয়ত করা জরুরি, তবে নির্দিষ্ট কোনো ভাষায় হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তাই আপনি চাইলে নিজের মাতৃভাষায় নিয়ত করে নিলেই যথেষ্ট।

আরবি | نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا من النفل يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم |
বাংলা উচ্চারণ | নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম, মিনান নাফলি!! ইয়া আল্লাহু, ফাতাকব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম। |
বাংলা অর্থ | হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল নফল রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব, তুমি আমার রোজা কবুল করে নাও এবং আমাকে পানাহার থেকে বিরত থাকার শক্তি দাও। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। |
FAQ’s
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ?
হ্যাঁ, রোজার জন্য নিয়ত করা ফরজ (অবশ্যক) তবে এটি মূলত অন্তরের কাজ। অর্থাৎ, মনে মনে রোজা রাখার সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যায়, আলাদাভাবে মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়।
রোজার নিয়ত কখন করতে হয়?
রমজানের ফরজ রোজার জন্য নিয়ত সেহরির সময় বা তার আগেই করতে হয়। তবে নফল রোজার নিয়ত দুপুরের আগে করা যেতে পারে, যদি কিছু খাওয়া-দাওয়া না করা হয়ে থাকে।
রোজার নিয়ত কি আরবিতে করতে হয়?
নিয়ত মূলত মনের ইচ্ছা। কেউ যদি আরবি না জানে, তাহলে মনে মনে বলতে পারেনঃ “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আজ রমজানের রোজা রাখছি।”