সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

পার্থিব জীবনে মানুষের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজন, অভাব কিংবা বিপদ দেখা দেয়। তখন নামাজ আদায় করে আল্লাহ পাকের সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত আর ইসলাম এ শিক্ষাই মুসলমানদের দিয়েছে। যা পবিত্র কুরআন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু সাঃ এর হাদিসের আলোকে সুস্পষ্ট।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামের আমলও ছিল এই যে, তাঁরা যখন কোন সমস্যায় পরতেন তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং নামায আদায় করে আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করতেন।

কোরআনের ভাষায়ঃ-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ
হে মুমিনগণ তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
(সুরাতুল বাকারা আয়াত নং ১৫৩)

পবিত্র হাদিস শরীফে রয়েছেঃ-

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ আউফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে বাক্তির আল্লাহর নিকট অথবা কোন মানুষের নিকট কোন প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন উত্তমরুপে ওযু করে এবং দুই রাকআত নামায আদায় করে নেয়।

তারপর যেন সে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসাবাদ এবং নবী করীম (সাঃ) এর প্রতি দরুদ পাঠ করে, তারপর একটি দোয়া পড়ে পাঠ করে।
(সে দোয়াটি আমরা একটু পরেই উল্লেখ করছি)

হযরত হুজাইফা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু সাঃ কে যখন কোন বিষয়ে চিন্তিত করত, তিনি কিছু নফল নামাজ আদায় করতেন।
(আবু দাউদ শরীফ)

সালাতুল হাজতের ফজিলত

যদি কোন বান্দার জরুরি হাজত দেখা দেয়, তখন তা পূর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যে খালেছ দিলে (১)দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে। নামাজ শেষে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতঃ কয়েকবার দুরুদ শরীফ পড়ে ইস্তেগফার করে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দু-হাত তুলে কান্নাকাটি সহকারে স্থান হওয়ার জন্য দোয়া করবে। ইনশাআল্লাহ উক্ত হাজত মহান প্রভু পূরণ করে দিবেন

(১) সালাতুল হাজত দু'রাকআত। তবে চার রাকাত ও বারো রাকাত আদায়ের বর্ণনাও পাওয়া যায়। দোয়া করার সময় গুনাহ মাফের জন্য, যাবতীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য এবং সমস্ত মুসলমানদের কল্যাণের জন্য দোয়া করা চাই।

সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়

কাজা নামাজ কিংবা সালাতুত তাসবীহ এর মতো সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন সময় নেই। সুবিধা মতে দিনে বা রাত্রে শুধু নিষিদ্ধ ও মাকরুহ ওয়াক্ত ব্যতীত যে কোন সময় যে কোন সূরা দিয়ে এ নামাজ আদায় করা যায়।

সুতরাং পুরো ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো টাইমে এই নামাজ আপনার টাকা-পয়সা মানসিক ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা দূর ইত্যাদি প্রয়োজনের কারণে পড়তে পারেন।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত

অন্যান্য নামাজের ন্যায় সালাতুল হাজত নামাজের জন্যও আরবিতে নিয়ত করা জরুরি নয়। নিজ ভাষায়ও নিয়ত করা যেতে পারে। নিম্নে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত আরবি / বাংলা উভয়টিই প্রদান করা হল।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত আরবিতেঃ-

نَوَيُتْ اَنْ اصَّلي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتيْ صَلّاه الحاجَه سَنُّهُ رَسول اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا الى جهَه اَلْكَعْبه الشَّريفُه اللَّهُ اكَّبِرْ

বাংলায় উচ্চারণঃ-

নাওয়াতুআন উসল্লিয়া লিল্লাহি তা"য়ালা রকাতাই সলাতিল হাজাতি সুন্নাতু রসুলিল্লাহি তা"য়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা"বাতিশ শারিফাতি "আল্লাহু আকবর"

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত বাংলায়ঃ-

আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুরাকাত সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম “আল্লাহু আকবার।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম অন্যান্য নফল নামাজের ন্যায়। তবে শুধু এতটুকু পার্থক্য যে, নিয়তের ক্ষেত্রে সালাতুল হাজত উল্লেখ করবে। এ নামাজ ২’রাকাত পড়বে কিংবা দুই রাকাত করজে,৪ রাকাত কিংবা ১২ রাকাত পর্যন্ত উল্লেখ রয়েছে। মোট কথা অন্যান্য নফল নামাজের ন্যায়ই এ নামাজ আদায় করবে।

সালাতুল হাজত নামাজের পর দোয়া

সালাতুল হাজত নামাজের পর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ আউফা (রাঃ) কে যে দোয়া করতে নির্দেশ করেছেন হুযুর (সাঃ) এরকম দুটি দোয়া পাওয়া যায়। এরমধ্যে প্রথম দোয়াটি পেয়েছি (তিরমিজি/ ইবনে মাজাহ শরিফ) থেকে এবং দ্বিতীয় দোয়াটি পেয়েছি পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা হযরত থানবী রহঃ কিতাব থেকে।

১ম দোয়াটি হলঃ-

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ الْحَلِيْمُ الْكَرِيْمُ سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ الْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ. اَسْأَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيْمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلاَمَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ لاَتَدَعْ لَنَا ذَنْبًا إِلاَّ غَفَرْتَهُ وَلاَ هَمًّا إِلاَّ فَرَّجْتَهُ وَلاَ حَاجَةً هِىَ لَكَ رِضًا إِلاَّ قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

‎উচ্চারণঃ- লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল হালীমুল কারীমুন সুবহা-নাল্লাহি রাব্বিল আ’রশীল আ’জীমি, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি রাব্বিল আ’লামীন, আস্‌আলুকা মূজিবা-তি রাহমাতিকা ওয়া আ’যাইমা মাগ্‌ফিরাতিকা, ওয়াল গনীমাতা মিন্‌কুল্লি বিররিন, ওয়াস্ সালা-মাতা মিন্ কুল্লি ইসমি, লা-তাদা’লানা-জাম্বান ইল্লা গফারতাহু অলা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু অলাহাজাতা হিয়ালাকা রিদন ইল্লা কাদাইতাহা-ইয়া-আরহামার রা-হিমী-ন।

অর্থঃ- আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি ধৈর্যশীল, মহামহিমান্বিত। আমি মহান আরশের প্রভু আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। হে পরম দয়ালু ও করুণাময়, আমি তোমার নিকট তোমার রহমত লাভের কারণসমূহ, তোমার ক্ষমালাভের সংকল্পরাজি, প্রত্যেক সৎ কাজের সার এবং অসৎ কাজ হতে শান্তি প্রার্থনা করছি। তোমার ক্ষমা ব্যতীত আমার কোন অপরাধকে তুমি ছেড়ে দিও না, আমার বিপদকে দূরবীত করে দাও, এবং আমার সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করে দাও, যা তোমার সন্তোষ লাভের কারণ হয়। (তিরমিজি/ ইবনে মাজাহ)

২য় দোয়াটি হলঃ-

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ ‏”‏

‎উচ্চারণঃ- সুবাহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা অতাবারকাসমুকা ওয়ালাইলাহা গইরুক।

অর্থঃ- হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসা জড়িত পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, তোমার নাম অনেক বরকতমণ্ডিত হোক, তোমার মহানত্ব সমুন্নত হোক। আর তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *