সকল কাজা নামাজের নিয়ত ও নিয়ম [আরবি-বাংলা]

আমরা অনেকেই কাজা নামাজ আদায় করতে চাই, কিন্তু কিভাবে কাজা নামাজের নিয়ত করতে হয় এবং তার আদায় পদ্ধতি কি? সে সম্পর্কে ভালোভাবে না জানার কারণে এখনঅব্দি শুরুই করা হয়নি। তাইনা?

যদি তাই হয়ে থাকে আজকের এই প্রতিবেদনটি শুধুই তাদের জন্য। যারা এখনো কাজা নামাজের নিয়ম, নিয়ত না জানার কাজা আদায় শুরু করেননি।

কাজা নামাজ

শরীয়ত সম্মত ওজরের কারণে অর্থাৎ (যেসব কারণে নামাজ কাজা করা যায়) কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন নামাজ তার নির্দিষ্ট টাইমে না পড়ে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে নামাজ আদায় করা হয় তাকেই কাজা নামাজ বলা হয়।

আর এই নামাজের হুকুম হলঃ- ফরজ নামাজের কাজা ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজের কাজা করা ওয়াজিব। যার বিস্তারিত আলোচনা কাজা নামাজের বিবরণ ও বিধান নামক আর্টিকেলে করা করা হয়েছে।

কাজা নামাজের নিয়ত

কাজা নামাজের নিয়তও অন্যান্য নামাজের ন্যায় আরবিতে করার কোন প্রয়োজন নেই। আরবীতে নিয়ত করতে হলে কাজা নামাজ ও ওয়াক্তিয়া নামাজের নিয়ত একই রকম। তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, কাজা নামাজে ان اصلي (আন উসাল্লিয়া) শব্দের স্থলে ان اقضي (আন আকদিয়া) এবং যে নামাজের কাজা আদায় করা হবে তার নাম উচচারণ করার পর ان فيتتي (আল ফাইতাতি) অর্থাৎ অনাদায়ী শব্দটি বাড়িয়ে বলতে হবে।

যেমনঃ- ফজরের কাজা নামাজের নিয়ত আরবিতে

نَوَايْتُ اَنْ ان اقضي لِلَّّهِ تَعَالَى ركعتي صلاه الفجر فيتتي فرض الله تعالى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَر

বাংলা উচচারণঃ-

নাওয়াইতু আন আকদিয়া লিল্লাহি তায়ালা- রাকআতাই সালাতিল ফাজরিল ফিতা্তি ফরদুল্তালাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতি কা’বাতিশ শারিফাতি – আল্লাহু আকবার।

কাজা নামাজের নিয়ত বাংলায়ঃ ফজর-

আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে বিগত ফজরের দুই রাকআত ফরয নামাজের কাজা আদায় করার নিয়্যাত করলাম- আল্লাহু আকবার।

উল্লেখ্য ফজরের কাজা নামাজের নিয়তের নিয়মানুসারে অন্যান্য কাজা নামাজের নিয়তও সেম। তবে পার্থক্য হল কোন ওয়াক্তের নামাজ এবং কয় রাকাত নামাজ আদায় করছেন এতটুকু। তথা صلاه الفجر (ফজরের) এর জায়গায় যেই নামাজের কাজা করবেন সেই নামাজের নাম। ركعتي (দুই রাকআত) এর জায়গায় যত রাকাত সেটা উল্লেখ করবেন না।

উমরি কাজা নামাজের নিয়ত

কারো অনেক দিনের নামাজ কাজা হয়েছে, যার ওয়াক্তের সংখ্যা অজানা, তাকে উমরি কাজা বলে। কোন ফরজ নামাজই অনাদায়ী থাকা অনুচিত। এর জন্য আল্লাহর দরবারে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ হবে। সুতরাং উমরি কাজা নামাজ আদায় করা আবশ্যক। কাজা নামাজের কোন সময় নির্ধারিত নেই। যেসব ৩ সময়ে নামাজ নাজায়েজ, তাছাড়া যে কোন সময় পড়া যায়। এমনকি কয়েক ওয়াক্ত কাজা নামাজ একত্রেও পড়া যায়।

ওমরি কাজা নামাজের নিয়ত ফজর আরবিতেঃ-

نويت ان اصلي لله تعالى ركعتي صلاه الفجر تكفيرا للقضاء فاتت مني على عمري متوجها الى جهه الكعبه الشريفه الله اكبر

বাংলা উচ্চারণঃ-

নাওয়াতুয়ান ওসল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাতাই সলাতিল ফাজরি তাকফিরা লিল কদায়ি ফাতাত মিন্নি আলা ওমরি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি “আল্লাহু আকবর”

বাংলায়ঃ-

আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আমার জীবনের প্রথম ফজর নামাজের কাজা আদায় করতেছি। “আল্লাহু আকবার”

উল্লেখ্য নিয়তের মধ্যে কেবল নামাজের নাম এবং রাকাত পরিবর্তন করলেই বাকি সকল উমরি কাজা নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে।

কাজা নামাজের নিয়ম

কাজা নামাজের আলাদা কোন নিয়ম নেই যেভাবে দৈনন্দ্বীনের নামাজ আদায় করি ঠিক সেভাবেই কাজা নামাজ পড়তে হয়। এতটুকু যে শুধু নিয়তটা পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ যে ওয়াক্তের বা যে টাইপের (ফরজ ওয়াজিব) নামাজের কাজা করছেন নিয়তে সেটা উল্লেখ করলেই যথেষ্ট।

১/ মাসালাঃ- কাজা নামাজ জামাতে আদায় করা।

একসাথে অনেক লোকের যদি নামাজ কাজা হয় তাহলে তারা এ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবে। ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায়ের যে নিয়ম রয়েছে সে অনুযায়ী। সুতরাং যোহর ও আসরের নামাজ চুপে চুপে কেরাত পড়বে এবং ফজর, মাগরিব ও এশার নামাজে উচ্চস্বরে কেরাত পড়বে। চাই এ নামাজগুলোর কাজা দিনে কিংবা রাতে আদায় হোক।

নামাজ কাজা হবার যদি এমন কোন কারণ ঘটে যা সকলের জানা, তাহলে আজানও একামতের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে তা মাকরূহ হবে না। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)

২/ মাসালাঃ- মুসাফির ও মুকীম অবস্থায় কাজা আদায়ের হুকুম।

সফর অবস্থায় মুসাফিরের যে নামাজ কাজা হয় মুকিম অবস্থায় যদি তার কাজা আদায় করে তবে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ গুলো কসররুপেই (২রাকাত) পড়বে। আর মুকিম অবস্থায় যে নামাজ কাজা হয় মুসাফির অবস্থায় যদি তার কাজা আদায় করে তা পূর্ণ চার রাকাতই পড়বে।(ফতোয়ায়ে শামী)

৩/ মাসালাঃ- সুন্নত ও নফল নামাজের কাজা আদায়ের হুকুম।

ফরজ ও ওয়াজিব নামাজের কাজা হয়ে থাকে। সুন্নত ও নফল নামাজের কাজা হয় না। তবে ফজরের সুন্নতের কেবল কাজা আদায়ের বিধান রয়েছে। এছাড়া অন্য কোন সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা নফল নামাজের কাজা নেই।

৩/ মাসালাঃ- কাজা নামাজের সংখ্যা জানা না থাকলে আদায়ের হুকুম ।

জীবনে কত কি পরিমান নামাজ কাজা হয়েছে তা জানা না থাকলে। চিন্তাভাবনা করে সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করে সে অনুযায়ী অতীতের কাজা নামাজ আদায় করবে। যদি সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করতে না পারে অনুমান করে কাজা আদায় করতে থাকবে। যদি মন নিশ্চিত ভাবে সাক্ষ্য দেয় আর কাজা বাকি নেই তখন থেকে আর কাজা করতে হবে না।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *