ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রত্যেক জাতিরই আনন্দ ও খুশির জন্য নির্দিষ্ট কিছুদিন রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদের জন্য ও তেমনি বছরে দুটি দিন নির্ধারণ করেছেন।
- ঈদুল ফিতর
- ঈদুল আযহা
ঈদুল ফিতর হচ্ছে রমজান মাসের রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে উদ্যাপন করা ধর্মীয় উৎসব। অপরটি হচ্ছে ঈদুল আজহা যা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালন করা হয়। এটিকে কোরবানির ঈদ ও বলা হয়।
এ দুটি দিনে শরিয়তের সীমার মধ্য থেকে আনন্দ করার সুযোগ রয়েছে এবং আল্লাহপাকের শুকরিয়া স্বরূপ দু’রাকাত করে নামাজ আদায়ের বিধান দিয়েছেন। এদিনে মুসলিম গন তাদের পরিবার-পরিজন, বন্ধ বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে উৎসব পালন করে।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত
ঈদের নামাজের নিয়ত আরবি অথবা বাংলায়ও করতে পারেন। তাই আপনার সুবিধা মত যে কোন একভাবে নিয়তকে সহি শুদ্ধভাবে শিখে নেবেন। নিম্নে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে ও বাংলায় উভয় ভাবে প্রদান করা হলোঃ-
আরবিঃ
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرَ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
বাংলা উচ্চারণঃ
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তায়া-লা রাকআতাই সালা-তি ঈদিল ফিতরি মাআ’সিত্তাতি তাকবীরা-তি ওয়াজিবুল্লা-হি তায়া-লা ইকতাদাইতু বিহা-জাল ইমা-মি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- “আল্লাহু আকবার”
বাংলায় নিয়তঃ
আমি কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে ঈদুল ফিতরের ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সাথে আদায় করছি। “আল্লাহু আকবার”
ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত
নিয়তের প্রসঙ্গ যেহেতু এসেছে দুইটা কথা না বললেই নয়। নিয়ত আরবি/ বাংলা কিংবা আপনি যেই ভাষারই হোন না কেন নিজ ভাষায় নিয়ত করা যেতে পারে। এটা জরুরি নয় শুধুমাত্র আরবিতে করা। নিম্নে আমরা ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত/ বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থসহ উল্লেখ করেছি।
ঈদের নামাজের নিয়ত আরবিতে যেভাবে করবেন।
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الاضحى مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
বাংলা উচ্চারণ-
নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’লা রাকআতাই সালাতিল ঈদিল আযহা, মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাত, ওয়াজিবুল্লাহি তা’আলা, ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমামি, মতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’ বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
ঈদের নামাজের নিয়ত বাংলায় যেভাবে করবেনঃ-
আমি কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে ঈদুল আযহার ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সাথে আদায় করছি।
নিয়ত শেষে তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাঁধবেন।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
- প্রথমে ইমামের পিছনে কিবলামুখী হয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়াবেন। অতঃপর ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়্যাত করবেন।
- অতঃপর দুই কান পর্যন্ত দুই হাত উঠাবেন। ইমামের তাকবীর বলার পর তাকবীর বলে অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলে অন্যান্য নামাজের ন্যায় তাহরীমা বাঁধবে। এ তাকবীরকে বলা হয় তাকবীরে তাহরীমা।
- অতঃপর সানা অর্থাৎ “সুবহানাকাল্লাহুম্মা” দু’আ পাঠ করবে।
- এরপর ইমামের তাকবীর বলার পর অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলে দুই হাত দুই কান পর্যন্ত উঠাবে। এরপর হাত ছেড়ে রাখবে, তিনবার “সুবহানাল্লাহ” পড়ার পরিমাণ অপেক্ষা করবে (এটি হচ্ছে প্রথম তাকবীর)।
- অতঃপর আবার ইমাম তাকবীর বলার পর অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলে দুই হাত দুই কান পর্যন্ত উঠাবে। এরপর হাত ছেড়ে রাখবে, তিনবার “সুবহানাল্লাহ” পড়ার পরিমাণ অপেক্ষা করবে (এটি দ্বিতীয় তাকবীর)।
- অতঃপর পুনরায় ইমামের তাকবীর বলার পর তাকবীর বলে দুই হাত দুই কান পর্যন্ত উঠাবে । এবার নাভির উপর হাত বাঁধবে (এটি তৃতীয় তাকবীর)।
- অতঃপর ইমাম আস্তে আস্তে পূর্ণ আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর উচ্চ স্বরে সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা পাঠ করবেন এবং মুকতাদীগণ কোন সূরা পাঠ করবে না বরং ইমামের কিরাআত মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে।
- ইমাম সূরা পড়ার পর অন্য সকল নামাজের ন্যায় রুকু সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করবেন এবং তাকবীর অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলে দ্বিতীয় রাক উদ্দেশ্যে দাঁড়াবেন।
- অতঃপর ইমাম সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং এর সাথে অন্য কোন সূরা মিলাবেন আর মুকতাদীগণ তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে।
- এরপর ইমাম অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবেন। প্রত্যেক তাকবীরের সময় দুই হাত কান পর্যন্ত উঠাবেন এবং প্রতিটি তাকবীরের পর হাত ছেড়ে রাখবেন (হাত ছেড়ে রাখা অবস্থায় তিনবার “সুবহানাল্লাহ” পড়ার পরিমাণ অপেক্ষা করবেন) মুকতাদীগণও ইমামের সাথে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে (মনে মনে)। প্রত্যেক তাকবীরের সময় দুই হাত কান পর্যন্ত উঠাবেন এবং হাত ছেড়ে দিবেন।
- অতঃপর এভাবে হাত ছেড়ে রাখা অবস্থাতেই ইমাম চতুর্থবার তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাবেন এবং এরপর যথারীতি সিজদা, আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দু’আ মাসূরা পাঠ করে নামাজ শেষ করবেন। মুকতাদীগণও অন্যান্য নামাজের ন্যায় ইমামের ইকতিদা করবে।