তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত [সময়, রাকাত] A to Z
দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সকল মুসলমানের উপর ফরজ! আর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মহান প্রভু তার প্রিয় বান্দাদের উপর ফরজ করেছেন! আর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বাদে বান্দা তার প্রভুর অধিক নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত আরো নফল নামাজ আদায় করতে পারে! আর নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ নামাজ তাহাজ্জুদ।
তাই আপনি যদি মহা ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানতে চান আমাদের পুরো আর্টিকেলটি একটু ধৈর্য সহকারে পড়ুন! ইনশাআল্লাহ তাতে তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত সকল বিষয়ে আপনি ক্লিয়ার হয়ে যাবেন, কারণ এই আর্টিকেলটিতে তাহাজ্জুদ নামাজ শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন তুলে ধরেছি।
তাহাজ্জুদ নামাজ
{التهجد} একটি আরবি শব্দ – قيام الليل রাতের নামাজ বলা হয়। এছাড়া তাহাজ্জত নামাজ কে ঐচ্ছিক ইবাদত ও বলা হয়! কেননা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ন্যায় তাহাজ্জুদ নামাজ প্রতিদিন আদায় করা অত্যাবশ্যক নয়।
তবে যে কেউ চাইলে প্রভুর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিদিনও আদায় করতে পারে। তা আদায়ের উত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ! এছাড়া রাতে ওঠার সম্ভাবনা না থাকলে এশার নামাজ আদায় করে বেতেরের পরেও পড়া যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
কোরআনের ভাষায়ঃ-
রহমানের বান্দা তো তারাই, যারা জমিনে নম্রভাবে চলে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ লোকেরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে “সালাম”। এবং যারা রাত্রি যাপন করে তাদের প্রতিপালকের জন্য সিজদারত ও দন্ডায়মান হয়ে।
(সূরা ফুরকান: ৬৩/৬৪) ১
রাসূল (সাঃ) এরশাদ ফরমানঃ-
তোমরা তাহাজ্জুদকে আঁকড়ে ধরো! কেননা এটা পূর্ববর্তী বুযুর্গানেদ্বীনদের সিফাত এবং এই নামাজ পালনকর্তার নৈকট্য লাভ, পাপ মোচনকারী এবং গুনাহ বাধা প্রদানকারী।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৩৬১৯)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিতঃ-
রাসূল (সাঃ) এত দীর্ঘ সময় কিয়ামুল লাইলে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তিনার পা মোবারক ফুলে যেত! এমতাবস্থায় আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনি এত পরিশ্রম কেন করছেন অথচ মহান প্রভু আপনার সামনের এবং পিছনের সবকিছুই মাফ করে দিয়েছেন? উত্তরে রাসুল (সাঃ) বললেন তবে কি আমি কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া পছন্দ করব না?
(সহীহ বুখারী: ২/৭১৬)
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হল সালাতুল ইশার পর থেকে সুবহে সাদিক এর পূর্ব পর্যন্ত। তবে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিতঃ-
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ- মহান প্রভু, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং তিনি বলতে থাকেনঃ কোন দোয়া করি আছো কি? আমি তার দোয়া কবুল করব! কোন প্রার্থনাকারি আছো কি? আমি তার প্রার্থিতবস্তু দান করব! কোন ক্ষমা প্রার্থী আছো কি? আমি আজ তাকে ক্ষমা করে দেবো! এভাবে প্রভু তার বান্দাদেরকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।
(সহীহ বুখারী: ১/১৫৩)
মাসআলাঃ তবে ঘুম থেকে ওঠার সম্ভাবনা না থাকলে বেতের নামাজ আদায়ের পরেও তাহাজ্জুদের নিয়তে কিছু নামাজ পড়ে নেওয়া যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?
তাহাজ্জুদ নামাজ ৪ রাকাত থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। রাসূল সাঃ ৮ রাকাত পড়তেন তাই এটাই উত্তম। তবে যার যতটুকু সাধ্য সে অনুযায়ী পড়বে! কারো যদি শেষ রাতে উঠার প্রবল আত্মবিশ্বাস থাকে সে বেতেরও শেষ রাতে পড়বে। অন্যথায় অবশ্যই বেতের এশার পরপরই আদায় করে নেবে।
রাসূল সাঃ রমজান এবং রমজানের বাহিরে ১২ রাকাতের বেশি পড়তেন না! প্রথমে ৪ চার রাকাত পড়তেন! এরপর ৪ রাকাত পড়তেন! যার দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না! অতঃপর তিনি তিন রাকাত বেতের পড়তেন।
(সহীহ মুসলিম: ১/২৫৪)
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
নিয়ত মানে সংকল্প বা মনের ইচ্ছা। আপনি যে নামাজেই পড়েন না কেন সে নামাজের ইচ্ছা করাই সে নামাজের নিয়ত! এবং সাথে সাথে কত রাকাত পড়বেন, সেটা নির্ধারণ করে নিবেন।
![তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত [সময়, রাকাত] A to Z তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত](https://namajshikkha.com/wp-content/uploads/2025/03/তাহাজ্জুদ-নামাজের-নিয়ত.webp)
তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত – tahajjud namaz niyat bangla
ওলামায়ে কেরাম আরবি থেকে বাংলাতে নিয়ত করাটাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন! কারণ আমরা বিশুদ্ধ আরবি উচ্চারণ করতে জানি না। নিম্নে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলায় দেওয়া হলঃ-
আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য দু’রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করছি। “আল্লাহু আকবার”
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত
কোনো নামাজের নিয়তই আরবিতে করা জরুরি নয়! তবে আপনি যদি বিশুদ্ধ আরবি পারেন চাইলে আরবিতেও করতে পারেন। নিম্নে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে দেওয়া হলঃ-
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ التَّهَجُّدِ سُنَّةَ رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ كَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ، اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ- নাওয়াইতোয়ান উছললিয়া লিল্লাহি তায়া’লা রক’আতাই সলাতিত তাহাজ্জুদি, সুন্নাতু রসুলিল্লাহি তায়া’লা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতি কা’বাতিশ সারিফাতি “আল্লাহু আকবার”
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম অন্যান্য নামাজের ন্যায়ই। শুধু নিয়ত পার্থক্য। যেহেতু এটা নফল নামাজ চাইলে ২’রাকাত কিংবা ৪ রাকাত করেও পড়তে পারবেন। পূর্ণ তাহাজ্জুদ নামাজ শিক্ষা নিম্ন দেয়া হলোঃ-
- নামাজের শর্ত সারায়েত পূরণ করে জায়নামাজে দাঁড়াবেন।
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করুন।
- তাকবীরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে হাত বাঁধুন।
- সানা, আউজুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ সেরে সুরা ফাতিহা এবং অন্য আরেকটি সূরা পড়ুন।
- এবার অন্যান্য নামাজের ন্যায় বাকি নামাজ কন্টিনিউ করুন।
বিঃদ্রঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট কোন কেরাত/সূরা নেই। যেকোনো সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে রাসুল সাঃ যেহেতু দী
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?
তাহাজ্জুদ নামাজ নফল এবং অন্যান্য নাওয়াফেল নামাজের মধ্য থেকে তাহাজ্জুদ অধিক মর্যাদা ও ফজিলত পূর্ণ।
তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত?
তাহাজ্জুদ যেহেতু নফল নামাজ তাই এই নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত নেই। তবে রাসুল ﴾ﷺ﴿ ৮ রাকাত পড়তেন এবং এটাই উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়?
এ-নামাজের নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই! যে কোন সূরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়! তবে তাহাজ্জুদ নামাজে লম্বা কেরাত নেওয়া উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়?
অনেকেই মনে করেন তাহাজ্জুদ নামাজ অন্ধকারে পড়তে হয়! আসলে এ-কথাটি ভিত্তিহীন।
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ التَّهَجُّدِ سُنَّةَ رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ كَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ، اللَّهُ أَكْبَرُ
তাহাজ্জুদ নামাজ কি দুই রাকাত পড়া যায়?
অবশ্যই! যেহেতু এটি ঐচ্ছিক নামাজ ইচ্ছামত যে করাকাত সম্ভব হয় সে করাকাত আদায় করবেন। যেহেতু নফল ইবাদত যত সে হত যত বেশি পড়বেন তত বেশি সওয়াব।
কত রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম?
কমপক্ষে ২ রাকাত, তবে ৮-১২ রাকাত পড়া সুন্নাত।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি নারীদের জন্য বিশেষ কোনো শর্ত আছে?
না, পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য একই বিধান।
Alhamdullaha this very helpful for the practicing Muslim Ummah!
insha’Allah I will send the link to my friends and family members.
Thanks!
Arman Nur
Email: armanperfect777@gmail.com
12-03-2025
তাহাজ্জুদ এর নামাজ আপনি লিখলেন নফল।।
কিনতু উপরের সব নিয়তের মধ্য তো লিখেছেন সুননাত।কোনটা আমল করবো দয়া করে জানাবেন।।
Onk ai bole sura ekhlas deye porte hoy ?! Sure ekhlas deye amra khibhabe korbo
কেমন কি আপনি বলেন সুন্নত আমিতো জানি নফল