তারাবির নামাজের নিয়ম-নিয়ত-দোয়া-মোনাজাত ও কত রাকাত? দলিলসহ

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে আজ আমি তারাবির নামাজ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় শেয়ার করতে যাচ্ছি, তারাবির নামাজের নিয়ত, নিয়ম। তারাবির নামাজের দোয়া, মোনাজাত এবং কয় রাকাত তারাবির নামাজ পড়তে হয়? ঠিক যেমনটি আপনারা গুগলে সার্চ করে থাকেন।

আপনার অনেকেই তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও মোনাজাত দোয়া সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন, ঠিক আপনাদের জন্যই আমাদের আজকের এই আয়োজন। এখানে আমরা তারাবিহ সংক্রান্ত সকল বিষয়বস্তু দলিল সহ সুস্পষ্ট করতে চলেছি। তাই আর্টিকেলটি শেষ অব্দি পড়ার অনুরোধ রইলো।

তারাবির নামাজ

রমজান মাসে এশার নামাজের পরে বেতের নামাজের পূর্বে জামাতে কিংবা একাকী তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। এ নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। দু” দু” রাকাত করে আদায় করতে হয়। তারাবির নামাজ কত রাকাত সে বিষয়ে লম্বা এখতেলাফ, ইমামে আজম ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মাযহাব অনুযায়ী তারাবির নামাজ ২০ রাকাত।

তারাবির নামাজের নিয়ত

তারাবিহ সহ যেকোনো নামাজের জন্য আরবিতে নিয়ত করা জরুরি নয়। চাইলে বাংলা আরবি এবং যেকোনো ভাষায় নিয়ত করা যেতে পারে, নিম্নে তারাবির নামাজের নিয়ত আরবি ও বাংলায় প্রদান করা হলো। ক্রমানুসারে তারাবির নামাজের নিয়ম-কানুন (পুরুষ ও মহিলা) দোয়া ও মোনাজাত উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

আরবিঃ

نوييْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ التَّرَابِيحِ سُنَّةُ رَسُولِ الله تَعَالَى مُتَوَجِهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللهُ أَكْبَر

বাংলা উচ্চারণঃ-

নাওয়াইতু আন অসল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা- রাক’আতাই সলাতিত তারাবীহি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা-। মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার ।

বাংলা নিয়তঃ

আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশে দু রাক’আত তারাবীহ্ সুন্নাত নামাজ আদায় করার নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।

জামায়া‘আতের সাথে আদায় করলেঃ (এ ইমামের পিছনে একতেদা করলাম) বলবে।

তারাবির-নামাজের-নিয়ম

তারাবির নামাজের নিয়ম

তারাবির নামাজের নিয়ম অন্যান্য নামাজের ন্যায়, একাকী কিংবা জামাতে, দুদু” দু” রাকাত করে ২০ রাকাত আদায় করা হবে। অন্য সব দুই রাকাত নামাজ যে রূপ সুরা কেরাতের সাথে আদায় করা হয় ঠিক তারাবির নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও সেম, তবে এতটুকু পার্থক্য যে শুধু নিয়তের ক্ষেত্রে তারাবির করবে। আর তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করার সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের?

মহিলাদের ক্ষেত্রে তারাবি নামাজের ভিন্ন কোন নিয়ম নেই, সেম নিয়মে মহিলারাও একাকী বাড়িতে দু’রাকাত করে তারাবির নামাজ আদায় করবে।

তারাবির নামাজের দোয়া

তারাবির নামাজের চার রাকাত পর পর সমাজে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করার রসম রয়েছে, তবে এখানে মাসালা হলঃ কেউ যদি এই দোয়াটি পড়তেই হবে অর্থাৎ বাধ্যতামূলক মনে করে সেক্ষেত্রে সেটি ভুল। আর যদি বাধ্যবাধকতা মূলক নয় এমনিতেই পড়ে সে ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। আর যে কেউ চাইলে নিম্নের দোয়াটি বাদে যে কোন দোয়া কিংবা তাসবীহ তাহলিল পড়তে পারবে। এছাড়া চাইলে চুপ করে বসেও থাকতে পারবে। দোয়াটি এইঃ-

তারাবির নামাজের দোয়া আরবি

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা

সুবহানাজিল মুলকি ওয়াল-মালাকুতি সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল-হাইবাতি ওয়াল-কুদরতি ওয়ালকি-বরিয়ায়ি ওয়াল-জাবারুতি সুবহানল-মালিকিল হাইয়িল্লাজি লায়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান-আবাদা সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল-মালাইকাতি ওয়ার-রুহ।

তারাবির নামাজের দোয়া

তারাবির শেষে বিতর নামাজের পূর্বে সম্বলিতভাবে কিংবা একাকী মোনাজাত করে থাকি আমরা অনেকেই, তবে তারাবির নামাজের মোনাজাতে এই দোয়াটি পড়তে হবে, কিংবা এ নামাজ শেষে মোনাজাত করতেই হবে এটা ভুল।

সুতরাং আপনি যদি তারাবির নামাজের পর মোনাজাত করেন কিংবা না করেন তাতে কোন সমস্যা নেই, আর যদি করেন তাহলে বর্তমান সমাজে যে দোয়াটির রসম রয়েছে সেই দোয়াই মোনাজাতে করতে হবে তা জরুরী নয়। নিম্নে তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ প্রদান করা হলোঃ

তারাবির নামাজের মোনাজাত আরবিঃ

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নায় ওয়ানাউজুবিকা মিনান্নার ইয়া খলিকাল জান্নাহ ওয়ান্নার- বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফারু ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তারু ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বারু ইয়া খলিকু ইয়া বার-আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু ইয়া মুজির-বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমিন।

তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থঃ

হে আল্লাহ আমরা আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই, হে জান্নাত এবং জাহান্নামের স্রষ্টা। আপনার রহমতে, হে পরাক্রমশালী- হে ক্ষমাশালী- হে দয়ালু- হে সাত্তার- হে রহমান- হে জব্বার- হে সৃষ্টিকর্তা- হে পরম করুণাময়। হে আল্লাহ আমাদেরকে আগুন থেকে বাঁচাও তোমার রহমতে হে পরম করুনাময়।

তারাবির-নামাজের-মোনাজাত

তারাবির নামাজ কত রাকাত সহিহ হাদিস

 ৮ রাকাআত তারাবীর হাদিসটির বিচার-বিশ্লেষনঃ-

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يوسف، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ أَنَّهُ قَالَ: أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيماً الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً.

মুহাম্মদ বিন ইউসূফের বর্ণনায় সায়েব বিন ইয়াযিদ রা. বলেন, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রা. হযরত উবাই ইবনে কা’ব ও তামীমে দারী রা.কে নির্দেশ করেন, যেন তারা লোকদের নিয়ে ১১ রাকাআত পড়েন। মুয়াত্তা মালেক।

পর্যালোচনা

হাদিসটিতে আহলে হাদিস ভাইদের ধারণা মতে ৩ রাকাআত বিতর এবং ৮ রাকাআত তারাবীহ, মোট ১১ রাকাআত পড়ার নির্দেশ রয়েছে। হাদীসটি প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে সহীহ। কিন্তু হাদীস বিশারদগণ এ হাদীসটির জবাবে দুটি পন্থা অবলম্বন করেছে। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ-

২০ রাকাআত তারাবীর বিশ্লেষনঃ-

যুগে যুগে তারাবীহ ও বিশ রাকাআতের প্রামাণিকতাঃ-

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে তারাবীহঃ– নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমজানের) এক রাতে মসজিদে তারাবীহ পড়লেন। সাহাবায়ে কেরামও তাঁর সাথে নামাজে শরীক হলেন। এ বিষয়ে লোকদের মাঝে আলোচনা হল। ফলে (দ্বিতীয় রাতে) মুকতাদীর সংখ্যা বেড়ে গেল। আরো আলোচনার ফলে তৃতীয় রাতে মসজিদ ভর্তি মুকতাদী হল। চতুর্থ রাতে মসজিদের ধারণ-ক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক হল। (তবে এ রাতে তারাবীহর জন্য তিনি মসজিদে আসলেন না।) 

ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে এসে নামায শেষে বললেন, রাতে আমার জন্য তোমাদের অপেক্ষার বিষয়ে আমি অবগত। কিন্তু (না আসার কারণ হল) আমার আশংকা হয়েছে যে, তোমাদের উপর তারাবীহ ফরয হয়ে যাবে। আর তোমরা তা পালনে অক্ষম হবে। (বুখারী ২০১২; মুসলিম ১৭৮)

উল্লেখ্য হাদিস দ্বারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম রমজানের তারাবি নামাজ পড়েছেন তা প্রমাণ হয়েছে কিন্তু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম সুনির্দিষ্টভাবে কোন নিয়ম ও জামাআতের ব্যবস্থা করা ছাড়া দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। (বুখারী ২০০৯)

হযরত আবু বকর (রাঃ) এর যুগে তারাবীহঃ- হযরত আবু বকর রাঃ এর খিলাফতকাল মাত্র দু’বছর। এ স্বল্পতম সময়ে বিভিন্ন ফিতনা মুকাবালায় বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তারাবীহর বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ হয়ে উঠেনি বা এ বিষয়ে কোন চিন্তা তাঁর মনে আসেনি। কাজেই তাঁর খিলাফতকালেও বিষয়টি আগের মতই থেকে যায়। (বুখারী ২০০৯)

হযরত উমর (রাঃ) এর যুগে তারাবীহঃ- এভাবে হযরত উমর (রাঃ) এর সাড়ে দশ বছর খিলাফতকালের শুরুতেও (এক রমজান) পূর্বের অবস্থাই ছিল। (প্রাগুক্ত) অতপর হযরত উমর (রাঃ) ১৪ হিজরীতে অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের জীবদ্দশায় তারাবীহর বিষয়ে দু’টি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 

১/ ফরয নামাযের মত এক ইমামের পিছনে তারাবীহর নামায জামাআতের সাথে আদায় করার ব্যবস্থা।

২/ তারাবীহর রাকাআত সংখ্যা বিশ নির্ধারণ। আরো বিস্তারিত জানুন

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

তারাবির নামাজ সুন্নত এবং এ নামাজ জামাতে আদায় করা অতি উত্তম। তবে একাকী পড়াটাও শরীয়তসম্মত, উত্তম হলো একাকী আদায়ের চেয়ে জামাতে আদায় করা। যেহেতু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের কে নিয়ে কয়েক রাতে জামাতের সাথে এ নামাজ আদায় করেছেন।

তারাবির নামাজ কত রাকাত?

২০ রাকাত ➤ হানাফি, শাফেয়ি, এবং হানবলি মাজহাবে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নত।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *