বেতের নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও সূরা [পুরুষ ও মহিলাদের]

বেতের নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, প্রিয়নবী ﴾ﷺ﴿ তার উম্মতদেরকে এ নামাজ আদায়ের বিশেষভাবে গুরুত্ব সহকারে নির্দেশ দিয়েছেন। এটি ওয়াজিব নামাজ, রাসুলুল্লাহ ﴾ﷺ﴿ নিয়মিত বেতের আদায় করতেন এবং তার উম্মতকে আদায় করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

বেতের নামাজকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেকের অনেক সংশয় যেমনঃ পুরুষ ও মহিলাদের বেতের নামাজের নিয়ম কি একই নাকি আলাদা?, বেতের নামাজের নিয়ত, সূরা ও রাকাত কত?, কিংবা বেতের নামাজের দোয়া কুনুত না জানলে করণীয় কি? ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম আরও সংশয়ের বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে, যাতে যাতে এই বেতের নামাজের ব্যাপকতা এবং গুরুত্ব পরিষ্কার হয়।

বেতের নামাজের পরিচিতি ও গুরুত্ব

“বেতের” “Witr” শব্দটি আরবি “وتر” থেকে এসেছে, যার অর্থ “বিজোড়”। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর সালাতুল বেতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। এ নামাজ এশার নামাজের পর হতে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত প্রত্যেক নর-নারী বালেগ বালিগার উপর ওয়াজিব। বেতের নামাজ স্বয়ং রাসুলুল্লাহ ﴾ﷺ﴿ নিয়মিত আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের আদায়ের নির্দেশ দিতেন।১

ফজিলত সম্পর্কেঃ

●─রাসুলুল্লাহ ﴾ﷺ﴿ বলেন, মহান আল্লাহ ﴾ﷻ﴿ তোমাদেরকে একটি অতিরিক্ত নামাজ দিয়ে সাহায্য করেছেন, যা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম। সেটি হল সালাতুল বেতের।
(তিরমিজি)

●─আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমাকে আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু ﴾ﷺ﴿ তিনটি বিষয়ে অসিত করেছেন, যা আমি মৃত্যু পর্যন্ত ত্যাগ করবো না, ১/প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখা ২/দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া ৩/ঘুমানোর আগে বেতের নামাজ পড়া।
(বুখারি ও মুসলিম)

●─অন্যত্রে রাসুলুল্লাহ ﴾ﷺ﴿ বলেন, হে কুরআনের অনুসারীরা, তোমরা বেতের নামাজ পড়ো। কারণ মহান প্রভু ﴾ﷻ﴿ বিজোড় এবং তিনি বিতর নামাজ ভালোবাসেন।
(তিরমিজি) 

বেতের নামাজের আদায়ের সময়

সালাতুল বেতের ইশার নামাজের পরে ফজরের সময়ের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় আদায় করা যায়। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন, তাদের জন্য উত্তম তাহাজ্জুদ নামাজের পরে বেতের নামাজ আদায় করা। তবে ঘুম থেকে ওঠার সংশয় থাকলে ইশার পরে বেতের নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

বেতের নামাজের নিয়ত

সমস্ত কাজ নিয়তের উপর নির্ভর করে কাজেই সর্বোপরি সকল আমলে নয়তই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী বেতের নামাজের নিয়ত আরবিতে ও বাংলায় প্রদান করা হলো।

বেতের নামাজের নিয়ত

বেতের নামাজের নিয়ত আরবিতেنَوَيُتْ اَنْ اصَّلي لِلهِ تَعَالَى ثلاثه ركعت صَلاه الوتر واجب اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا الى جهَه اَلْكَعْبه الشَّريفُه اللَّه اكَّبِرْ
আরবিঃ বাংলা উচ্চারণনাওয়াইতুয়ান ওসল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা, সালাসা রাকাআতি সালাতিল উয়িতরি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইইলাজিহাতি কাবাতিশ শারিফাতি “আল্লাহু আকবার”
বেতের নামাজের নিয়ত বাংলায়আমি ক্যাবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য তিন রাকাত ওয়াজিব বেতের নামাজ আদায় করছি “আল্লাহু আকবার”
বেতের নামাজের নিয়ত

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ নিয়তের ক্ষেত্রে আরবি এবং বাংলা উভয়ভাবেই করা যায়। তবে আরবি উচ্চারণে ভুল হলে বাংলাতে করাই উত্তম। মোট কথা যে কোন ভাষায় শুদ্ধভাবে নিয়ত করলেই চলবে।

বেতের নামাজের সূরা

বাজারের অনেক নামাজ শিক্ষা বইয়ে বেতর নামাজের জন্য বিভিন্ন সূরা কেরাত নির্ধারিত করতে দেখা যায়। সহি কথা হল বিতর নামাজের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ কোনো সূরা নেই, বরং কোরআন থেকে যেকোনো সূরা কেরাতের মাধ্যমে এ নামাজ আদায় করতে পারেন।

বেতের-নামাজের-নিয়ম

বেতের নামাজের নিয়ম

যেহেত বেতের নামাজের নিয়ম অন্যান্য নামাজ থেকে কিছুটা পার্থক্য, সেহেত আমরা অনেকেই এই নামাজে অনেক রকমের ভুল করে বসি, এজন্য আমাদের জন্য অপরিহার্য সম্পূর্ণরূপে বেতের নামাজ শিক্ষা লাভ করা। নিম্নে বেতেরও অন্যান্য না মাজের মধ্যে পার্থক্য সহ বেতের নামাজের নিয়ম তুলে ধরা হলো।

  • বেতের নামাজ আদায় করতে প্রথমে নিয়ত করুন। (নিয়তি একটু পরেই আমরা উল্লেখ করছি)
  • তারপর ক্রমানুসারে অন্যান্য নামাজের ন্যায় দুই রাকাত নামাজ আদায় করে বৈঠক করুন।
  • বৈঠকে শুধু তাশাহুদ পড়ে পুনরায় তৃতীয় রাকাতের জন্য আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যান।
  • এবার সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোনো একটি সূরা পড়ুন (বেতের নামাজের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়াটা ভালো)।
  • সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নাভির নিচে (মহিলারা বুকের উপর) হাত বাঁধুন।
  • এবার দোয়ায়ে কুনুত পাঠ করুন।
  • এবার ক্রমানুসারে অন্যান্য নামাজের ন্যায় বাকি নামাজ শেষ করুন।
দোয়ায়ে কুনুত

আশা করি উল্লেখ্য প্যারাগুলো একটু মন দিয়ে ভালো করে পড়লে পূর্ণাঙ্গ বেতের নামাজ শেখা হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তাই প্রয়োজনে আবারো রিপিট করুন।

মহিলাদের বেতের নামাজের নিয়ম

অনেকেই মনে করি বিভিন্ন নামাজ যার আদায় পদ্ধতি পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। আসলে নামাজের কাইফিয়াত (অর্থাৎ হাত বাধা ওঠা-বসা ইত্যাদি) ছাড়া আদায় পদ্ধতি পুরুষ এবং মহিলা সবার ক্ষেত্রেই একই। অর্থাৎ পুরুষ এবং মহিলাদের বেতের নামাজের নিয়মও সেইম। যা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি।

বেতের নামাজ কত রাকাত পড়া হয়?

প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন, এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম। (বাধ্যবাধকতা নেই)

বেতের নামাজের গুরুত্ব কী?

এটি ওয়াজিব নামাজ, যার প্রতি হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বদা গুরুত্ব দিয়েছেন।

বেতের নামাজে দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়?

তৃতীয় রাকাতে রুকুর আগে বা রুকুর পরে কুনুত দোয়া পড়া হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *